Header Ads

Header ADS

প্রযুক্তি উপনিবেশ গড়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে ভারত

ব্রিটিশরা ভারত শাসন করে গেছে দীর্ঘদিন। কিন্তু এখন ভারত শাসন করছে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। ভারতে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য বেশি। ফেসবুকের হোয়াটসঅ্যাপ সেখানকার মোবাইল ফোনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাপ। বেশির ভাগ স্মার্টফোন চলছে গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে। সেখানকার জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব। অনলাইন কেনাকাটাতেও এগিয়ে আমাজন। তাহলে ভারতের থাকছেটা কী?
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর বর্তমান শাসক দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশ্নটি। তাদের ভাষ্য, ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা ভারত শাসন করে গেছে। এখন আবার ভারতে প্রযুক্তি উপনিবেশ গড়েছে উপনিবেশ শক্তি। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ উপনিবেশ স্থাপন ঠেকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রযুক্তি নীতিনির্ধারণী বিষয়ে কাজ করা ভীনিত গোয়েঙ্কা নামের এক রেলওয়ে কর্মকর্তা সম্প্রতি এক সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তাঁর ভাষ্য, দেশ হিসেবে তাঁদের এগিয়ে আসতে হবে এবং বলতে হবে, এটা যথেষ্ট হয়েছে।
সম্প্রতি ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মন্ত্রীরা প্রযুক্তিশিল্পে কঠোর নিয়মনীতি প্রয়োগের বিষয়টি চাপানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এতে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনা মূল্যে রাজত্ব করতে দেওয়া হবে না। দেশটির ১৩০ কোটি মানুষের ওপর তারা এত দিন স্বাধীনভাবে নিয়মনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হিসাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভারত এখন অবশ্য আকর্ষণীয় বাজার। কারণ, প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল বাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরে ইউরোপের মতো সীমা বা বিধিনিষেধ আরোপ করা, যাতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে। ভারতের জনগণের স্পর্শকাতর তথ্য যাতে দেশের মধ্যেই সংরক্ষণে থাকে এবং ই-কমার্সে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে টিকতে পারে, সেই সুরক্ষাব্যবস্থা করতে চাইছে ভারত।
ভারতের ইন্টারনেট নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়টি মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতা ও লাভের পরিমাণ কমাবে। এ ছাড়া তাদের বৈশ্বিক ইন্টারনেট উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে।
গত মে মাসে ইউরোপে নতুন প্রাইভেসি আইন জারি হয়, যাতে ইউরোপিয়ান নাগরিকদের তথ্যের ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও এ রকম একটি প্রাইভেসি আইন করা হয়েছে।
টেক কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে ভারত অনেকটাই চীনকে অনুসরণ করতে যাচ্ছে। তবে চীন যতখানি কঠোর, ভারত অবশ্য তার কাছাকাছি যাচ্ছে না। চীন বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে নিজেদের দূরে রেখেছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা জনগণের তথ্যে বেইজিংয়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি প্রতিযোগীদের সীমিত করে সেখানে আলিবাবা ও বাইদুর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেড়ে উঠতে দেওয়ার বিষয়টির প্রশংসা করেন। তবে নিয়ন্ত্রকেরা এটাও চান না যে মার্কিন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করা লাখো ভারতীয় সমস্যার মুখে পড়ুক।
সম্প্রতি ফেসবুক থেকে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পাওয়া ওই ঘটনায় ভারতীয় অনেক নাগরিকের তথ্য ছিল। ওই ঘটনা জানাজানি হলে ভারতীয় কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন। ফেসবুক জানায়, ওই ঘটনায় ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হয়, যাতে ৫ লাখ ৬০ হাজার ভারতীয় নাগরিকের তথ্য ছিল। ভারতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিল ওই প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি ভারতের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হোয়াটসঅ্যাপকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। তারা চাইছে, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে যাতে গণহারে বার্তা পাঠানো না যায়, তা ঠেকানো ও ট্র্যাক করার ব্যবস্থা করবে হোয়াটসঅ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপের বার্তার উৎস জানানোর দাবিও ওঠে।
হোয়াটসঅ্যাপ সে দাবি মানেনি। তারা বলছে, এ ধরনের প্রযুক্তি তৈরি করা হলে তা এনক্রিপশন ভেঙে ফেলবে এবং বার্তা আর ব্যক্তিগত রাখা যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এখন স্থানীয় আইন না মানা পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের পেমেন্ট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিয়ম করা হয়েছে, আর্থিক তথ্য ভারতে সংরক্ষণ করতে হবে।
ভারতের সরকার চাইছে, ভারতীয় ও বিদেশি কোম্পানিগুলো ট্যাক্স, তথ্য সংরক্ষণ, নিরাপত্তা, দাম ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে একই আইন মেনে চলে।
যেমন: ভারতের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো অভিযোগ করছে, বর্তমান ট্যাক্সের আইনে বিদেশি সেবাগুলো বেশি সুবিধা পাচ্ছে, ফলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম খরচে সেবা দিতে পারছে তারা।
মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আড়ালেই এসব নিয়মনীতি সরল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকেই এ বিষয়গুলো স্পর্শকাতর বলে সরাসরি কিছু বলতে চাইছে না।
তবে প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভারত সরকার যেসব প্রস্তাব আনছে, তাতে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় বাড়বে এবং ভারতীয় তথ্য ব্যবহার করে উন্নত সেবা দিতে বিঘ্ন ঘটবে। সেখানে বিনিয়োগের বিষয়টিও নিরুৎসাহিত করবে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, ভারতে তথ্য সংরক্ষণ করার বেশ কিছু অসুবিধা আছে। কারণ, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো আইনি সুরক্ষা সীমিত। সরকারি অনুসন্ধান ও তথ্যের অনুরোধের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আইনি সুরক্ষা না থাকায় এসব তথ্য সহজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে চলে যাবে। 

এ বছরে শরতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আলোচনায় বিষয়টি আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামের প্রধান নির্বাহী মুকেশ আঘি বলেন, বিদেশি টেক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলে ভারতের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। ভারতে তথ্য রাখার বিষয়টিতে জোর করা হলে ভারতের বড় আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হবে। ভারতের প্রযুক্তি অর্থনীতি দাঁড় করাতে বহুজাতিক কোম্পানির দরকার হবে।
খসড়া প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি সচিব অজয় সাহানি বলেন, ‘আইন চূড়ান্ত করার আগে সরকার মন খোলা রাখছে। সব সহযোগীর জন্য আমাদের কাঠামো ন্যায্য হবে।’

No comments

Theme images by latex. Powered by Blogger.