Header Ads

Header ADS

করোনা: নিরাশার মাঝেও যতো আশা জাগানিয়া খবর

করোনা: নিরাশার মাঝেও যতো আশা জাগানিয়া খবর


করোনা ভাইরাসের বিস্তারের ভয়াবহতায় কাঁপছে বিশ্ববাসী। দিনকে দিন তা ছড়িয়ে পড়ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে কিছু আশার কথা বলা হচ্ছে-

দূষণ হ্রাস হচ্ছে পৃথিবীর:

পৃথিবী দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রায় অবস্থান করছে। প্রকৃতির যেন শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মানুষর অযাচিত ব্যবহারই তার জন্য দায়ী। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি। লকডাউন হয়ে গেছে বহু শহর ও দেশ, শিল্পকারখান, গাড়ি চলাচল সীমিত, অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ। এর ফলে দূষণের স্তর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। শিল্প উদ্যোগ এবং যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ার ফলে চীন ও উত্তর ইটালিতে মারাত্মক বায়ু দূষণকারী ও রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি করা নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমে গেছে। নিউইয়র্কের গবেষকরা বিবিসিকে বলছে, করোনা ভাইরাসের ফলাফলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, কার্বন মনোক্সাইড প্রধানত গত বছরের তুলনায় ৫০% হ্রাস পেয়েছে। যানবাহনের ধোয়া থেকেই মূলত তা বেশিরভাগ নির্গত হয়। তাছাড়া অসংখ্যা ফ্লাইট বাতিল ও কয়েক মিলিয়ন কর্মকর্তা নিজ ঘরে বসেই কাজ করছে। এতে করে কমেছে বায়ু দূষণের পরিমাণ।

খালগুলো উন্মুক্ত হচ্ছে

ভেনিসের আবাসিক নগরীর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহিত খালগুলো দীর্ঘদিন দূষিত ও বদ্ধ জলাসয়ে পরিণত হওয়ার উপক্রম। করোনা আসার পর থেকে খালগুলো পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত হচ্ছে। পানির গুণমানে বিশাল উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উত্তর ইটালির জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের জল প্রবাহগুলোতে পলির স্তর জমেছিলো। ইদানিং সেসব নোংরা জল এতোই পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, সেখানে মাছ চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।

উদারনৈতিক মনোভাব সৃষ্টি

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার মধ্যেই মানুষের হৃদয়ে জন্ম নিচ্ছে উদারতা, সহানুভূতি এবং দয়া। করুণ এই সময়ে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে। এমন বহু গল্প এখানে উঠে এসেছে। যেমন প্রবীণ ও দুর্বল লোকদের জন্য আসবাব ও ঔষুধপত্র সরবরাহ করার জন্য ৭২ ঘণ্টায় সাড়া পাওয়া গেছে ১ হাজার ৩০০ স্বেচ্ছাসেবীর। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, যুক্তরাজ্যের কয়েক হাজার মানুষ এই ভাইরাসে মানুষকে সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছায় কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত হয়েছে। কানাডায় গঠিত হয়েছে একই ধরনের স্বেচ্ছাসেবী দল। অস্ট্রেলিয়ার সুপার মার্কেটে এমন একটি বিশেষ ‘বয়স্ক সময়‘‘ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেসময়টা শুধু মাত্র প্রবীন ও প্রতিবন্ধীদের শান্তিপূর্ণভাবে কেনাকাটার জন্য বরাদ্দ। এভাবে অনেক উদ্যোগে জনগণ অর্থ, চিন্তা, শ্রম দিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। অনেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠান কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে থাকাকালীন মুহুর্তগুলো কীভাবে অতিবাহিত করা যাবে, তার ধারণা দিচ্ছেন, দূর থেকে শিখিয়ে দিচ্ছেন ব্যায়ামের কৌশল। মানুষের পাশে দাঁড়াতে মানুষ এভাবে স্বেচ্ছায় দল গঠন করে এগিয়ে আসছে। এভাবেই মানুষের জন্য মানুষের মাঝে উদারনৈতিক মনোভাব জন্ম হচ্ছে।

তৈরি করছে মানসিক ঐক্য

করোনা ভাইরাস বাহ্যিকভাবে মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও, আদতে তাতে মানুষ মানুষকে ভিন্নভাবে অনুভব করার সুযোগ পাচ্ছে। সাধারণত কাজের ব্যস্ততার মাঝে আমরা বাড়ির লোকজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি, বন্ধু-বান্ধবের মাঝে তৈরি হয় দূরত্ব। করোনা ভাইরাসের কারণে লোকজনকে বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। এতে করে বিশ্বের সম্প্রদায় চলে আসছে মানসিকভাবে কাছাকাছি। পরিবারগুলোর বন্ধন সুদৃঢ় করছে। যেমন, ইটালি লকডাউন হওয়ার পর লোকজন তাদের বাড়ির বারান্দায় নিজেদের মনোযোগ ঠিক রাখার জন্য গানের আসর বসাচ্ছে, একসাথে মজা করছে, ফান করছে। মৃত্যুর দিনগুলোতেও পরস্পরে খুনসুটি করছে। দক্ষিণ স্পেনের একজন ফিটনেস প্রশিক্ষক তার একটি অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের মাঝখানের ছাদে ফিটনেস অনুশীলন ক্লাস চালু করেছে, যেখানে কোয়ারেন্টিনে থাকা লোকজন নিজেদের বাড়ির বারান্দায় থেকে যোগ দিচ্ছে। অনেকে ফোন ও ভিডিও কলের মাধ্যমে নিজেদের বন্ধু ও প্রিয়জনদের সাথে পুনরায় সংযোগ সৃষ্টি করছে, স্থাপন করছে যোগাযোগ। বন্ধুদের অনেক দল ভার্সুয়াল ক্লাব আয়োজন করছে বা ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করছে। এতে পরস্পর আরো কাছাকাছি আসছে। করোনা ভাইরাসের সময় স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য কর্মীদের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দূরে থাকা প্রিয় মানুষের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ সৃষ্টি করে পারস্পরিক খবরা খবর রাখছে। এতে করে মানুষের মাঝে অন্তরাল থেকেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে মানসিক একধরনের ঐক্য।

বাড়ছে সৃজনশীলতা

যখন সারা বিশ্বে মিলিয়ন সংখ্যক মানুষ পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন এবং ঘরবন্দি, তখন অনেকে এই সুযোগ নিচ্ছে সৃজনশীল কোনো কাজের উদ্যোগের, মনোযোগ রাখছেন নতুন কিছু সৃষ্টিতে। ওয়াশিংটন ডিসির পাবলিক লাইব্রেরি ভার্সুয়াল বুক ক্লাব চালু করেছে। অন্যদিকে ইতালীয় মাইকেলিন-অভিনীত শেফ ম্যাসিমো বোতুরা রান্নাঘর কোয়ারেন্টিন নামে একটি ইনস্টগ্রাম সিরিজ চালু করেছে, যেখানে ঘরে আটকে থাকার সময় ভালো মানের খাদ্য তৈরির সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা নিজেদের বিভিন্ন শখের বর্ণনা শেয়ার করছে। যেমন বই পড়া, চিত্রাঙ্কন, রান্না, বুনন সহ নানা কাজে দক্ষতার কথা বলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির একজন আর্ট শিক্ষক তার স্কুলের বাচ্চাদের মাঝে সৃজনশীলতা বৃদ্ধিতে লাইভ ক্লাস চালু করেছে নিজ বাড়িতেই। অনেক সরকারি আকর্ষণীয় স্থান বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিল্পের অনুরাগীরা প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ও ভ্যাটিকান মিউজিয়ামের বিখ্যাত স্থাপত্য ও চিত্রকর্মগুলো নিজের থাকার ঘরে বসেই ভার্সুয়াল প্লাটফর্মে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অবজারভেটরি ঘরে আটকা থাকা লোকদের জন্য রাতের আকাশে ভ্রমণ করার প্রস্তাব পযন্ত দিয়েছে।

এভাবেই করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ দিনগুলোতেও মানুষের মাঝে ইতিবাচক চিন্তা ও কাজের উদ্রেক হচ্ছে, যা পৃথিবীর নিরাশাগ্রস্ত মানুষের মাঝে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করছে।

No comments

Theme images by latex. Powered by Blogger.