Header Ads

Header ADS

মহামারি থেকে যেভাবে ওমর (রা.) বেঁচে ছিলেন

মহামারি থেকে যেভাবে ওমর (রা.) বেঁচে ছিলেন


মহামারি থেকে যেভাবে – ফিলিস্তিনের আল কুদস ও রামলার মধ্যভাগে অবস্থিত একটি অঞ্চল হলো আমওয়াস বা ইমওয়াস। সেখানে প্লেগ রোগ প্রথম প্রকাশ পায়। অতঃপর তা শামে ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামের ইতিহাসে তা ‘তাউন ইমওয়াস’ নামে পরিচিত। ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল ইমওয়াস অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস করে ওই স্থানে কানাডাভিত্তিক ইহুদি তহবিলের অর্থায়নে একটি পার্ক তৈরি করা হয়। বর্তমানে তা ‘কানাডা পার্ক’ নামে সবার কাছে পরিচিত।

১৭ হিজরি ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ওমর (রা.) দ্বিতীয়বারের মতো শাম পরিদর্শনের জন্য বের হন। ওমর (রা.) শামে পৌঁছার পর শুনতে পান যে সেখানে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করছে।



আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত, উমর বিন খাত্তাব (রা.) শামের উদ্দেশে বের হন। শামে অবস্থিত তাবুক গ্রামের ‘সারগ’ নামক এলাকার কাছে এলে সেনাপতি আবু উবাদাহ ও অন্য নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়। ওমর (রা.)-কে তাঁরা অবহিত করল যে শামে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের কথা শুনে ওমর (রা.) আমাকে বলেন, ‘ইসলামের প্রথম পর্যায়ের মুহাজিরদের ডাক দাও।’ তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। কেউ বললেন, আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। তা না করে ফিরে যাওয়া আমরা সমীচীন মনে করছি না। অনেকে বলল, আপনার সঙ্গে অনেক মানুষ ও রাসুল (সা.)-এর মহান সাহাবিরা আছেন। এমতাবস্থায় তাঁদের নিয়ে আপনি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় যাবেন না।

সবার কথা শুনে ওমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা চলে যাও।’ অতঃপর ওমর (রা.) আমাকে বললেন, ‘আনসারদের আমার কাছে ডেকে আনো।’ তাঁদের ডেকে পরামর্শ করলেন। তাঁরাও মুহাজিরদের মতো মতবিরোধ করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা চলে যাও।’ অতঃপর আমাকে বলেন, ‘এখানে কুরাইশ বংশের প্রবীণ মুহাজির সাহাবিদের ডাক দাও।’ আমি তাদের ডেকে আনি। তাঁদের মধ্যে দুজনও মতবিরোধ করল না। সবাই অভিন্ন কথা ব্যক্ত করে বলল, আমরা মনে করছি, আপনি সব মানুষকে নিয়ে ফিরে যাবেন। মানুষকে এই মহামারিতে নেবেন না।’



অতঃপর ওমর (রা.) সবাইকে সামনে নিয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘আমি চলে যাব। তোমরাও চলে যাও।’ [তখন শামের গভর্নর ছিলেন আবু উবাদায় বিন জাররাহ (রা.)] এ কথা শুনে আবু উবাদাহ (রা.) বললেন, ‘আপনি আল্লাহর তাকদির থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন?’ ওমর (রা.) বলেন, ‘আহ, হে আবু উবাদাহ, এমন কথা তুমি ছাড়া অন্য কেউ বলত!’ মূলত ওমর (রা.) তাঁর মতভিন্নতাকে অপছন্দ করেছেন।

ওমর (রা.) আবু উবায়দার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা আল্লাহর এক তাকদির থেকে অন্য তাকদিরের দিকে পালিয়ে যাচ্ছি। যেমন মনে করো, তোমার অনেক উট আছে। তা নিয়ে তুমি এক উপত্যকায় এসেছ। উপত্যকার দুটি প্রান্ত আছে। এক প্রান্ত উর্বর। আরেক প্রান্ত শুষ্ক। তুমি উর্বর প্রান্তে উট চরালে কি আল্লাহর তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না? এবং শুষ্ক প্রান্তে চরালেও কি আল্লাহর তাকদিরের ওপর নির্ভর করবে না?’



কিছুক্ষণ পর আবদুর রহমান বিন আউফ (রা.) এলেন। কোনো এক প্রয়োজনে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয় সম্পর্কে আমার জ্ঞান আছে। আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে শুনেছি, ‘তোমরা কোনো অঞ্চলে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা শুনলে তাতে প্রবেশ করবে না। তবে সেখানে থাকাবস্থায় প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না।’ এ কথা শুনে ওমর (রা.) আলহামদুলিল্লাহ বললেন। অতঃপর সবাই ফিরে গেলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭২৯)

ওমর (রা.) মহামারি চরম আকার ধারণের খবর অবগত হন। ওমর (রা.) চাইলেন সেনাপতি আবু উবায়দা (রা.)-কে ফিরিয়ে আনতে। তাই ওমর (রা.) একটি চিঠি লিখলেন, ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষণ হোক। তোমার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ সম্পর্কে সরাসরি তোমাকে বলতে চাই। তাই তোমাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলছি, আমার পত্র পড়ে আমার উদ্দেশে বের হওয়ার আগে পত্রটি তোমার হাতছাড়া করবে না। রাতে পত্র পৌঁছলে সকাল হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে। আর দিনের বেলায় পৌঁছলে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যাত্রা শুরু করবে।’ আবু উবায়দা (রা.) পত্র পড়ে উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমিরুল মুমিনিনকে ক্ষমা করুন।’ অতঃপর ওমর (রা.)-এর উদ্দেশে একটি পত্র লিখলেন, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আমি আপনার প্রয়োজনের বিষয় বুঝেছি। আমি এখন মুসলিম সেনাবাহিনীতে অবস্থান করছি। তাদের ছেড়ে যেতে চাই না। আল্লাহ তাআলা আমিসহ সবার ব্যাপারে ফায়সালা করবেন। অতএব হে আমিরুল মুমিনিন, আপনার সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে মুক্ত করুন। আমার সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে আমাকে ছেড়ে দিন।’



আবু উবায়দা (রা.)-এর পত্র পড়ে ওমর (রা.) কাঁদতে থাকেন। আশপাশের মুসলিমরা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আমিরুল মুমিনিন, আবু উবায়দা কি শহীদ হয়েছেন? ওমর (রা.) বলেন, ‘না, তিনি এখনো শহীদ হননি। কিন্তু …।’ অর্থাৎ শিগগির তিনি শহীদ হবেন।’ এর পরই আবু উবায়দা (রা.) প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৭/৪৪)

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ’র লেখা থেকে

No comments

Theme images by latex. Powered by Blogger.